।। বাক্‌ ১২৩ ।। অনুপম বলছি ।।






জাপানে খৃস্টধর্মের প্রসার এবং বিঘ্ন-বিপত্তি ও সেই সঙ্গেই বৌদ্ধ কর্তৃপক্ষের দ্বারা জাপানের প্রাথমিক খৃস্টান ও প্রচারকদের উপরে অকথ্য নির্মম পরিকল্পিত অত্যাচারের উপরে একটি সিনেমা বানিয়েছেন, মার্টিন স্কোরসেজি। সিনেমাটির নাম, সাইলেন্সএই নামেই ইঙ্গমার বার্গম্যান একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন। দুই পরিচালকই ঈশ্বরের অনুগামীদের দুরূহতম মুহূর্তে, যখন বিশ্বাস ও আস্থা হারানো খুব সহজ, যখন মানুষের উপরে অত্যাচারের ও পীড়নের স্রোত নেমে আসছে, যখন তারা নিষ্ফল হতাশায় ডুবে যাচ্ছে, তখনও, খৃস্টীয় অর্থাৎ রোমান ক্যাথলিক ঈশ্বরের নীরবতা ও নিশ্চেষ্টাকে ধরতে চেয়েছেন, ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। জানতে চেয়েছেন, কোনোদিনই সামনে এসে না দাঁড়ানো সেই বহুশ্রুত ঈশ্বরের প্রতি, সকল কিছুর পরেও, অকুন্ঠ আনুগত্যের কি কোনো প্রয়োজন বা অবকাশ, আদৌ আছে? স্কুরসেসের সিনেমাটিতে জাপানের বৌদ্ধ ইনকিউজিটার কেবল দাবি করছেন সদ্য খৃস্টান হওয়া একজনকে যিশুর বা ম্যাডোনার আইকনের উপরে পা চাপিয়ে দিতে হবে, কিছু ক্ষেত্রে থুতুও ফেলতে হবে, বলতে হবে মেরি একজন বেশ্যা ছিলেন। এটা, করলে মুক্তি, না করলে মৃত্যু। সেই মৃত্যু, খুব ভয়ানক। অন্য ধর্মান্তরিতদের হাড়ের মধ্যে ত্রাস ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য, সেই মৃত্যুকে একটি মোক্ষম শিক্ষামূলক নাটক হিসেবে পেশ করবেন ইনকিউজিটর।  

নাটক। যেটা ধর্মের জন্য প্রয়োজন হয় না, কিন্তু, সম্প্রদায়ের জন্য খুব জরুরি জিনিস। এই নাটকের দাবি মেনেই মন্দিরে আজান হয় না, মসজিদে ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায় না। বিশেষ কবি-লেখকের দেখা বিশেষ পত্রিকায় মেলে না। 

নাট্যরস আমরাও উপভোগ করি। পেশ করি। কিন্তু, সর্বোপরি, চরিত্র আর মৌলবাদ যে এক নয়, সেটা আমরা বারবার প্রমাণ করতে চাই। আমাদের যদি কেউ ব্রাত্য করেন, আমরা তাঁকে করব কেন? যতক্ষণ না বিষ দিচ্ছেন, আমরা তাঁর অমৃতের দিকেই নাগাল বাড়িয়ে দেব। 

এবং, ‘বাক্‌’ আবার আপনাদের সামনে এল। চিয়ার্স!!

                                              অনুপম মুখোপাধ্যায়
                                                      পরিচালক : ‘বাক্‌’