।। বাক্‌ ১২৩ ।। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় ।।




জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের একটি কবিতা



প্রস্তাব

গাছকাটা নিয়ে বিক্ষোভ সভা হচ্ছিল ; না, বিক্ষোভের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা সভা। 
একজন  বলেছিলেন - গাছেদের রক্তপাত হ'লে ভাল হ', প্রয়োজন ছিল তীব্র আর্তনাদ। তাহ'লে নির্দ্বিধায় খুন করার আগে দু'বার ভাবত উন্নয়ন। 
এক তরঙ্গ সহমত প্রকাশ, বাহবার পর যখন বক্তা চায়ের কাপটিতে প্রথম চুমুক দিয়েছেন
একজনকে বলতে শোনা গেল - রক্তপাত বা আর্তনাদ দেখেও কি থমকে থেকেছে উন্নয়ন? 
নাক দিয়ে বেরিয়ে আসা হাসি, মসৃণ করে কাটা সরু গোঁফের রেখার হালকা তীর্যক। উত্তর নয়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে এইগুলোই পাওয়া গেল। 
একজন বললেন - ঘরটা বড়ই গুমোট। এসি রাখোনি কেন?
সভাপতি নির্দেশ দিলেন - জানলাটা খোলার ব্যবস্থা করো, একটু হাওয়া আসুক। 

পথ আটকে দাঁড়ানোর অপরাধে কোনও বৃক্ষ দিনে দুপুরে খুন হওয়ার পরেও 
মামলা বা সুবিচার নিয়ে কোনও কথা উঠবে না। 
গাছের সনাতন ধর্ম নেই, সংখ্যালঘু নেই, অনগ্রসর শ্রেণী নেই। 
যে গাছ কাঠে, তার আছে... তবে এক্ষত্রে অপ্রাসঙ্গিক। 

শহরে পার্ক, আর পথের দু'ধারে সবুজায়ন হচ্ছে, কেউ বলে না!
গাছ তো কাটা হবেই, নাহ'লে তো জঙ্গলেই চলে যেতে পারে সবাই!

বাড়ির ছাত, বারান্দা আর বৈঠকখানাকে ছোট ছোট টবে; সুন্দর করে যথেষ্ট সবুজায়ন হয়েছে। 
সখী বৃক্ষরাজী; সুখী গৃহকোণ।
 
নিহত বৃক্ষের শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ না খুঁজে... এইসব উজ্জ্বল কচিপাতাগুলোকে দেখতে দেখতেই হেসে ওঠো সহনাগরিক। 
ট্রেনে যেতে যেতে সবুজ ক্ষেত দেখে বলো - বাহ্‌! 
আঁকার খাতায় হালকা আর গাঢ় সবুজ মোমরঙ দিয়ে সেইসব মাঠ আর ঝোপঝাড় আঁকুক দুপুর জাগা বালিকার মোম মোম আঙুলগুলো। 
রক্ত, আর্তনাদ আর উন্নয়ন থেকে দূরে। অন্ততঃ তালা দেওয়া কোলাপসিবল গেট, আর বন্ধ দরজার এপারে তো দূরে বলেই মনে হয়! 

সেদিন সভাশেষে সেই ব্যক্তির খোঁজ করেছিল কেউ কেউ... যার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। তাকে চিনে রাখা প্রয়োজন, তাকে এড়িয়ে যাওয়া দরকার বিশেষ কারণে। 
সবুজের মানবাধিকার নেই, সবুজরক্ষা করতে অনেক খরচ, বিপুল কর্মযোগ্য। হিসেব করতে বসতে হবে আবার, সকলের সময় হলে। 
ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপন করে প্রতিবাদের প্রস্তাব খারিজ হয়েছে। অতটা কষ্টসাধন করা সম্ভব নয়। এখন দহনকাল।


No comments:

Post a Comment